মামলা তুলে না নেওয়ায় কিশোরী ও তাঁর পরিবারকে প্রকাশ্যে লাঠিপিঠা : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল

ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মামলা তুলে না নেওয়ায় কিশোরী ও তাঁর পরিবারকে প্রকাশ্যে লাঠিপিঠা,

অভিযুক্তের দাবী জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মিথ্যা মামলা! 

কুমিল্লার দেবীদ্বারে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে আদালতে দায়ের করা মামলা তুলে না নেওয়ায় অষ্টম শ্রেণীতে পড়–য়া এক কিশোরী(১৪) ও তাঁর মা জেসমিন আক্তার(৩৫), পিতা অটোরিক্সা চালক জামাল হোসেন(৪৫)কে টানা হেচড়া করে ঘর থেকে ধরে এনে সড়কে ফেলে প্রকাশ্যে দিবালোকে কিল, ঘূষি, লাথি ও লাঠিপিটা করে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই ঘটনায় স্থানীয়দের সহযোগীতায় আহতদের উদ্ধারপূর্বক চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলা সুলতানপুর ইউনিয়নের কুরছাপ পূর্বপাড়ায় এ ঘটনা ঘটলেও বৃহস্পতিবার (২৬আগস্ট) দুপুরে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চারদিকে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওর সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার বিকেলে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জের নির্দেশে উপ-পরিদর্শক(এস,আই) ওমর ফারুক, উপ-পরিদর্শক(এস,আই) আলমগীর হোসেন, উপ-পরিদর্শক(এস,আই) শাহাদাত হোসেন’র নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ভিক্টিমের পরিবারকে থানায় এসে অভিযোগ দেয়ার জন্য বলেন।

বৃহস্পতিবার (২৬আগস্ট) রাতে ভুক্তভোগী কুরছাপ উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়–য়া ওই কিশোরীর বাবা মোঃ জামাল হোসেন বাদী হয়ে কুরছাপ গ্রামের একই পরিবারের ৮জনকে অভিযুক্ত করে দেবীদ্বার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্তরা হলেন, মোঃ নুরুল ইসলাম’র পুত্র মোঃ কাউছার (৩৫) ও মোঃ হাসান(২৫), মৃত; আলী হোসেন’র পুত্র মোঃ নুরুল ইসলাম (৬৫), মোঃ কামাল (৫৫) ও মোঃ সফিকুর রহমান (৬০), মোঃ কাউছারের স্ত্রী মোসাঃ নারগিছ (৩০), মোঃ হাসান’র স্ত্রী মোসাঃ আনিকা (২৫), মোঃ কামাল হোসেন’র স্ত্রী মোসাঃ কুলছুম (৪০)। মামলা নং-১৯. তারিখ-২৬/০৮/২০২১ইং।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া  ৩২ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, ধর্ষণচেষ্টা মামলার আসামী মো. হাসানের বড় ভাই কাউছার আহম্মেদ ভিক্টিম ওই কিশোরীর মাকে প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে লাঠিপিটা করছে। এসময় তাকে স্থানীয় কয়েকজন থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে ওই কিশারীর মা অচেতন অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৪ মে বিকাল ৩টায় ওই কিশোরীকে  একটি খালি ঘরে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায় হাসান। এ ঘটনা হাসানের চাচী কুলসুম আক্তার দেখে ফেললে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়।  পরে অচেতন অবস্থায় স্থানীয় লোকজন এসে ওই কিশোরীকে ঘর থেকে উদ্ধার করেন। পরদিন ওই কিশোরীর বাবা মো. জামাল হোসেন কুমিল্লা আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি ধর্ষণ চেষ্টার মামলা দায়ের করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয় হাসানের পরিবার। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর  সহযোগিতায় মামলা তুলে নিতে ওই কিশোরীর পরিবারকে চাপ প্রয়োগসহ বিভিন্ন হুমকি ধামকী দিতে থাকে । পরে গত ২০আগস্ট দুুপুরে হাসানের বড় ভাই কাউছার ওই কিশোরীর মাকে রাস্তায় পেয়ে প্রকাশ্যে লাঠিপিঠা করে।  নির্যাতনের শিকার ওই নারী অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।  নির্যাতনের এ ভিডিওটি বৃহস্পতিবার স্থানীয়  এক যুবক ফেইসবুকে পোস্ট করলে মুহুর্তে তা ছড়িয়ে পড়ে। এতে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

 

অভিযুক্ত মোঃ হাসান জানান, আদালতে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলার ঘটনাটি ছিল মিথ্যা সাজানো। জামাল চাচার সাথে আমাদের জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ওরা এ মিথ্যা মামলা দায়ের করে আমাদের দূর্বল করতে চেয়েছিল। মিথ্যা মামলা তুলে না নেয়ায় রাগের মাথায় চাচির উপর হামলা করেছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, তাদের পারিবারিক বিরোধ মিমাংসা করার চেষ্টা করেছিলাম। মিমাংসা করতে পারিনি। ওই মামলার বাদী-বিবাদী আপন চাচাতো ভাই বোন। ওদের মধ্যে দির্ঘদিনের জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল। আমরা স্থানীয় চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের চেষ্টায় তাদের পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হই। সত্যটা পুলিশের তদন্তে বেড়িয়ে আসবে। তবে গত ২০ আগষ্ট মোঃ জামাল হোসেন’র স্ত্রী সহ পরিবারের সদস্যদের উপর যে বর্বরোচিত হামলা করেছে তা অত্যন্ত দুঃখ জনক।

ভুক্তভোগী ওই কিশোরী ও তার মাতা জেসমিন আক্তার’র উপস্থিতিতে ভিক্টিমের বাবা মোঃ জামাল হোসেন বৃহস্পতিবার রাতে কথা বলার সময়  জানান,  মোঃ হাসান আমার মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্ষণ চেষ্টা করে। আমি কুমিল্লা আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। মামলা দায়েরের পর থেকে তা তুলে নিতে কিছু প্রভাবশালীর সহযোগিতায় হাসানের পরিবার আমাকে হুমকি ধামকি দিতে থাকেন। মামলা তুলে না নেওয়ায় আমার স্ত্রীকে প্রকোশ্যে লাঠিপিঠা করে। এর আগে আমার মেয়ে ও আমাকেও এভাবে রাস্তায় ফেলে প্রকাশ্যে লাঠিপিঠা করেছে। ওই ঘটনায় আজ রাতে থানায় মামলা দায়ের করেছি।

এ ব্যাপারে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আরিফুর রহমান বৃহস্পতিবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত সাড়ে ৯টায় জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম পাঠিয়েছি। ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর বাবা মোঃ জামাল হোসেন দেবীদ্বার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। দোষীদের গ্রেফতার করতে অভিযান চালানো হবে। এঘটনার পূর্বে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলাটিরও তদন্ত চলছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন