এ উপলক্ষে শনিবার (৩০ জুলাই) সকাল ১১টায় কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার গল্লাই গ্রামের পারিবারিক কবরস্থনে প্রয়াত ডেপুটি স্পীকার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আলী আশরাফের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, কবর জিয়ারত ও স্মরণ সভার আয়োজন এবং আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোকের এই ঝরনাধারায় নামক গ্রন্থ প্রকাশের মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠকরা প্রয়াত ডেপুটি স্পীকারকে স্মরণ করছে।
সকালে গল্লাই কবরস্থানে এসব অনুষ্ঠানে প্রয়াত এ নেতার সন্তান চান্দিনা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মুনতাকিম আশরাফ টিটু ছাড়াও ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর দুপুরে চান্দিনা মহিলা বিশ^ বিদ্যালয় কলেজ মাঠে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বক্তরা প্রয়াত ডেপুটি স্পীকারের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের ওপর আলোকপাত করেন। তারা বলেন, তার মতো গুণী রাজনীতিক বিরল। তার এসব অনুকরণীয় অবদান সবাই চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
এদিকে, প্রয়াত ডেপটি স্পীকার অধ্যাপক মো. আলী আশরাফের মৃত্যুবার্ষিকীতে আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাহাবুব উল হানিফ শোক বাণী দিয়েছেন।
দলীয় ও পরিবার সূত্র জানায়, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ এমপি। বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফ ছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন সংগঠকও, তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন কর্মী। জীবনের ৭৪ বছরের মধ্যে ৬০ বছরই তিনি সক্রিয় ছিলেন রাজনীতিতে। তাঁর জীবনের সোনালি সময়গুলো ব্যয় করেছেন রাজনীতি ও দলের পেছনে। সারাজীবন কাজ করেছেন দল ও মানুষের কল্যাণে। এমনটাই বলেছেন, কুমিল্লার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
১৯৪৭ সালের ১৭ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করা অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ চান্দিনা উপজেলার গল্লাই ইউনিয়নের গল্লাই মুন্সী বাড়ির মরহুম মাওলানা মো. ইসমাইল হোসেন মুন্সী এবং মরহুমা মোসা. শামছুন্নাহার বেগমের একমাত্র ছেলে। আলী আশরাফ ১৯৬২সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যোগদান করে রাজনীতি অঙ্গণে পা রাখেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (অনার্স) এবং অর্থনীতিতে এমএ পাশ করেন।
১৯৭০ এর পাকিস্তান সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে ‘মই’ প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। ওই নির্বাচনে বিজয়ী না হলেও ‘মাছ’ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ১৯৭৩ সালের প্রথম বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ যতগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, তার সকল নির্বাচনেই তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
তিনি ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫ম বারের মত বিজয় লাভ করেন। ২০০০ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯২ সালে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হলে সেসময় প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ। অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ প্রথম জাতীয় সংসদ সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সপ্তম জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ডেপুটি স্পীকার, নবম জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, দশম জাতীয় সংসদের বাণিজ্য মন্ত্রলায় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও মৃত্যুকালীন সময়ে একাদশ জাতীয় সংসদে সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত কমিটির সভাপতির পদে ছিলেন।
কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক আলহাজ¦ জাহাঙ্গীর আলম সরকার আক্ষেপ করে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘ক্ষমা করবেন আলী আশরাফ ভাই, আমরা লজ্জিত! বর্ষীয়ান রাজনীতিক, জাতীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক ডেপুটি স্পীকার ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আলী আশরাফের আজ (৩০ জুলাই) শনিবার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।
এ উপলক্ষে কিন্তু আওয়ামীলীগ থেকে কোন কর্মসূচি ঘোষনা ছিলনা। এমনকি দলটির ফেসবুক পেজেও দুপুর একটা পর্যন্ত কোনো পোস্ট ছিলনা। দোয়া করি আপনি ওপারে ভালো থাকবেন ভাই আপনি।’
অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ এমপি ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভালোবেসে ১৯৬২সালে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধুর খুব কাছের কর্মী ছিলেন তিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হওয়ায় তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরও কাছে চলে যান।
জাহাঙ্গীর আলম সরকার আরও বলেন, অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ এমপি ছিলেন মাটি ও মানুষের নেতা। তিনি দলকে সুসংগঠিত করার জন্য জীবনের সোনালি সময়গুলো দলের পেছনে ব্যয় করেছেন। এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ছিলেন একজন আদর্শবান নেতা ও প্রকৃত শিক্ষানুরাগী। তার এই মৃত্যু আমাদের জন্য অনেক বেদনার ও কষ্টের ছিলো।
উল্লেখ্য, গত ২০২১ সালের (৩০ জুলাই) শুক্রবার বিকেল পৌনে ৪টায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন