মোহাম্মদ শরিফুল আলম চৌধুরী, কুমিল্লা : “আপিল বিভাগের রায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে গিয়েছে বলে আমি মনে করি। যার কারণে এখন এ ধরনের আন্দোলনের আর কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে আমরা মনে করছি।”
সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে গত কয়েক দিনের আন্দোলনে কোথাও বাধা দেওয়া না হলেও কুমিল্লার মুরাদনগরে এবার প্রয়োজনে কঠোর হওয়ার বার্তা দিল উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান ডক্টর আহসানুল আলম সরকার কিশোর।
ডক্টর কিশোর বলেছেন, সর্বোচ্চ আদালত স্থিতাবস্থা জারির পরও আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নেমে জনদুর্ভোগ ঘটালে তারা কঠোর হতে’ বাধ্য হবেন।
বুধবার দুপুরে এ কথা বলছিলেন মুরাদনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ডক্টর কিশোর। তার মতে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যে আদেশ দিয়েছে, তারপর আর এ আন্দোলনের কোনো ‘যৌক্তিকতা নেই’।
ডক্টর কিশোর বলেন, কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্রকে বলবৎ রেখে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা দিয়েছে আপিল বিভাগ। এখন ২০১৮ সালের সেই পরিপত্র বলবৎ আছে। যার কারণে এই চার সপ্তাহ কোটা নিয়ে আন্দোলন করার কোনো অবকাশ বা প্রয়োজন আছে বলে মনে করে না।
“শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও সহমর্মিতা আছে। কিন্তু সেই সাথে মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় আদালত, তার প্রতি আমরা সকলে শ্রদ্ধাশীল থাকতে বাধ্য। আমাদের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সবাই শিক্ষিত, তাই আমি তাদের অনুরোধ করব, এ বিষয়ে তারা যেন আর জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কোনো কর্মসূচি না দেয়।”
এক প্রশ্নের জবাবে ডক্টর কিশোর বলেন, “রাস্তায় নেমে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। এক রিট আবেদনের রায়ে গত ৫ জুন মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্ট।
এরপর থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে আন্দোলনে নামেন চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা। প্রথম কয়েক দিন মিছিল, মানববন্ধনের মত কর্মসূচি থাকলেও এ সপ্তাহের শুরু থেকে শুরু হয় তাদের অবরোধ কর্মসূচি, যার নাম তারা দিয়েছে ‘আমরা রাজাকার, আমরা রাজাকার’।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা শুরুতে চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ করলেও এখন তারা মাঠে রয়েছে এক দফা নিয়ে।
তাদের দাবি হল- সকল গ্রেডে সকল প্রকার ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ‘ন্যূনতম পর্যায়ে’ এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে৷
ওই ‘ন্যূনতম পর্যায়’ বলতে প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ অনগ্রসর লোকদের জন্য ৫ শতাংশ পর্যন্ত কোটা ‘গ্রহণযোগ্য’ মনে করছে তারা।
আন্দোলনকারীরা বুধবার সকালে কুমিল্লা- সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধ করে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন।
তাদের এই কর্মসূচিতে যানজট এবং পরিবহন না পেয়ে মানুষ নিদারুণ দুর্ভোগে পড়লেও পুলিশ বা আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদেরকে কোথাও কঠোর ভূমিকায় দেখা যায়নি। আন্দোলনকারীদের সরাতে বল প্রয়োগের পথে না গিয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা বরং বিকল্প পথে যান চলাচল অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে গেছে।
আন্দোলন করে যে আদালতের রায় বদলানো যায় না, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকতে বলেন ডক্টর কিশোর।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন