ফাহিমা বেগম প্রিয়া, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি : আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর শিথিলতায় দেশে আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করছে মাদকের ব্যবহার। গত কয়েক মাসে মাদকসেবীর সংখ্যা অন্তত ২০ লাখ বেড়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন।
হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। সেই সঙ্গে মাদক ব্যবসায় দেশ থেকে অর্থপাচারও বাড়ছে।
২০২৩ সালের জুনে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আংকটাড (ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, প্রতিবছর শুধু মাদকের কারণে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বর্তমানে পাঁচ হাজার ৮৪১ কোটি টাকারও বেশি) পাচার হয়ে যায়। অবৈধ মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অর্থপাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম এবং এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক সেবন এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। কোনো রাখঢাক নেই।
কিন্তু এর নিয়ন্ত্রণে কার্যত সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢিলেঢালা অবস্থা আর পুলিশের শিথিলতার কারণে সারা দেশে প্রায় অবাধে ছড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের মাদক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের মাদক নিয়ে গভীর কোনো গবেষণা নেই। দেশে কত মাদক কারবারি ও মাদকসেবী রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান মেলে না।
যা বলা হয়, তা অনেকটাই অনুমানভিত্তিক। মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিক গবেষণা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানাচ্ছেন খোদ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারাই। পুলিশ, বিজিবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
মুরাদনগর ও দাউদকান্দি উপজেলা জুড়ে মাদকের সয়লাব সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানের শিথিলতার সুযোগে কুমিল্লাসহ সারা দেশে মাদক কারবারের ব্যাপকতা অতীতের যেকোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে।
মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) তথ্য মতে, দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা বেড়ে এখন দেড় কোটির কাছাকাছি। সংস্থাটির প্রধান ডা. অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের গবেষণা বলছে, করোনার সময় থেকে মাদকসেবীর সংখ্যা বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। গত কয়েক মাসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর শিথিলতার কারণে ২০ লাখের মতো মাদকসেবী বেড়েছে। আমরা বলছি, দেশে বর্তমানে প্রায় দেড় কোটি মাদকসেবী রয়েছে। ’
সূত্র জানায়, মাদকসেবীর বেশির ভাগই তরুণ এবং তারা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। একসময় ছাত্ররা মাদক সেবনের সঙ্গে জড়িত থাকলেও বর্তমানে ছাত্রীরাও মাদক ব্যবহার করছে। গত ১ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য সেবনরত অবস্থায় ৯ শিক্ষার্থীকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ছাত্রীও ছিলেন। গত ৯ মার্চ যৌথ বাহিনীর অভিযানে কুমিল্লা শহরের ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দেওয়া মো. জিদান নামের এক যুবকসহ দুজনকে মাদকসহ আটক করা হয়। হাসপাতালের ভেতরে ইয়াবা সেবনসহ বিক্রিও করত তারা। এ বিষয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগী পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের অভিযানে হাসপাতালের ভেতর থেকে জিদান ও তার সহযোগী দালাল ইকবালকে আটক করা হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তল্লাশি ও নজরদারিতে শিথিলতা তৈরি হওয়ায় বিভিন্ন কৌশলে দেশে মাদকের চালান আনছে মাদক কারবারিরা। অ্যাম্বুল্যান্স এবং সবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য পরিবহনের গাড়িতে করে ইয়াবা, ফেনসিডিল ও হেরোইন নিয়ে আসছে কারবারিরা। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফের ইয়াবা কারবারিরা ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবার চালান পাঠাচ্ছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। শক্তিশালী করা হচ্ছে অভিযান। গত রবিবার ৪০ হাজার পিস ইয়াবা ধরা হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। ’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন