কুমিল্লার নির্বাচনী মাঠে তিন সমন্বয়ক, উজ্জীবিত অনুসারীরা

মোহাম্মদ শরিফুল আলম চৌধুরী, কুমিল্লা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম 'জাতীয় নাগরিক কমিটি'র সাংগঠনিক কার্যক্রম এগিয়ে চলছে বেশ জোরেশোরে। ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে ৫ আগস্টের ঐতিহাসিক পটপরিবর্তনের গত ৮ সেপ্টেম্বর আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি' গঠন করা হয়। জাতীয় নাগরিক কমিটি' ব্যানারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভোটের মাঠ গোছাচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। কুমিল্লার তিনটি আসনকে ঘিরে সম্প্রাতিক সমাবেশ, আলোচনা সভায় করছেন এক উপদেষ্টা ও দুই সমন্বয়ক। দুই মাস ধরে তারা নিজ নির্বাচনী এলাকায় রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, সমাজিক কর্মকাণ্ড, খেলাধুলা, ওয়াজ মাহফিলসহ নানা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা প্রচার প্রচারণা থেমে নেই। তবে একেবারে মাঠে নেই আওয়ামীলীগ, তাতে দলগুলো গুলোর অভ্যন্তরে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এ দুটি দলই তাদের নির্বাচনী মাঠ প্রস্তুত করছেন। এদিকে লক্ষ্য করা যায় রাজনৈতিক মাঠের দুইটি দলের বাইরে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আফিস মাহমুদ কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর), হাসানাত আব্দুল্লাহ কুমিল্লা- ৪ (দেবীদ্বার), রিফাত রশিদ কুমিল্লা- ৯ (লাকসাম মনোহরগঞ্জ) আসনের হাট-বাজার, স্কুল মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সভা-সমাবেশে বক্তব্য ও বিবৃতি দিচ্ছেন। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অংশ নিচ্ছেন তারা।

এতে সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন রাজনৈতিক দলের মাঠ গোছাচ্ছেন তারা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লার এই তিন কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহন করবে এমটাই ধারণা অনেকের। 

একদিকে ভোটের মাঠের আধিপত্য, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল এবং নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিকল্প নেই। তাই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই নির্বাচনমুখী হচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা না পেলেও বিএনপি-জামায়াতের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠ গোছানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার)  সমন্বয়ক হাসানাত আব্দুল্লাহ, রিফাত রশিদ কুমিল্লা- ৯ (লাকসাম- মনোরঞ্জনগঞ্জ), বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আফিস মাহমুদ কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) সহ ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ ছাড়া পুরোদমে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে সব রাজনৈতিক দল। সচেতন মহলের দাবি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদার মনোভাবের ফলে মুক্ত গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ পাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। এতে গণতন্ত্রকামী মানুষের আশা-আকাক্ষার প্রতিফলন ঘটতে শুরু করেছে। এই জেলায় রাজনৈতিক মাঠে তৎপরতায় শীর্ষে বিএনপি- জামায়াত।

দুটি দলই তাদের সাংগঠনিক কাঠামো শক্ত করতে নানামুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা না পেলেও বিএনপি-জামায়াতের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এখন পুরোদমে মাঠে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। এতে রাজনীতির মাঠে বাড়তি আমেজ সৃষ্টি।

বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীরা টার্গেট নিয়ে কাজ করছেন। এ দুটি দলই পৃথক কর্মসূচি নিয়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের সাথে সমান পাল্লা দিয়ে ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যায়ের ভোটের মাঠ গুছাচ্ছেন নাগরিক কমিটি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার আহ্বায়ক মোহাম্মদ সাকিব হোসাইন বলেন, আসলে মানুষই চাচ্ছে আমরা নির্বাচন করি, এদেশের উন্নয়নে তরুন সমাজ অংশীদার হবে, এটা তো স্বাভাবিক। তবে আমরা এখনো অফিসিয়ালি কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি, কুমিল্লার তিনটি আসনের ভোটের মাঠে আমাদের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা মিথ্যে নয়।

কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক উপদেস্টা ও বর্তমান মুরাদনগর উপজেলা নাগরিক কমিটির সদস্য আলহাজ্ব গোলাম কিবরিয়া সরকার বলেন, শেখ হাসিনা পতনের পর এদেশে গণতন্ত্রের পথ উন্মোচন হয়েছে, এদেশের মানুষ রাজনীতি করার অধিকার পেয়েছে, কুমিল্লা নয় শুধু যেকোন স্থান থেকে যে কেউই রাজনৈতিক করার অধিকার রয়েছে। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক হাজী আমিনুল রশিদ ইয়াছিন বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ, বাংলাদেশের যে কেউ যেকোনো স্থান থেকে নির্বাচন করতে পারে, জনগণ যদি তাদেরকে ভোট দেয় আমাদের আপত্তির কোনো সুযোগ নেই।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন