মোহাম্মদ শরিফুল আলম চৌধুরী, কুমিল্লা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মোহাম্মদ জাকির হোসেন নামে এক কর্মকর্তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে শিক্ষার্থীরা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা পরিষদের সবশেষ কমিটির সভাপতি ছিলেন।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন থেকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন তারা।
জানা যায়, কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন ছাড়াও মোহাম্মদ জাকির হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দফতরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় তার নামে একটি মামলাও রয়েছে। ওই মামলায় ১১ নম্বর আসামি তিনি।
এছাড়াও বিগত সরকারের আমলে শিক্ষকদের মারতে তেড়ে যাওয়া, নথি জালিয়াতিসহ আরও কয়েকটি কারণে গত বছরের ৫ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫তম সিন্ডিকেটে তাকে চাকরি থেকে ওএসডি করা হয়।
আটকে নেতৃত্ব দেয়া কুবি শিক্ষার্থী হান্নান রহিম বলেন, ‘আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের মারধর করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সেজন্য তার নামে একটি মামলাও দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিগত সরকারের আমলে দলীয় প্রভাব খাটায়ে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের তিনি লাঞ্ছিত করেছেন। শিক্ষকদের মারতেও তেড়ে গেছেন। সবমিলায়ে তাকে নিয়ে অনেক অভিযোগই ছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে আজকে আমরা তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিই।’
কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজ্জাদ করিম খান বলেন, ‘কুবি শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে তাকে আটক করে কোটবাড়ি ফাঁড়ি পুলিশের কাছে সোপার্দ করে। সেখান থেকে তাকে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় করা একাধিক মামলা আসামি জাকির। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হবে।
প্রসঙ্গত, জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে নথি জালিয়াতি, সহকর্মী ও কর্মচারীদের সঙ্গে অসদাচরণ, হেনস্তা ও গালমন্দ, জামায়াত-শিবির ট্যাগ লাগিয়ে হয়রানি, বিভিন্ন নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে।
এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষককে হেনস্তা ও লাঞ্ছিত করতে ঔদ্ধত্য হয়ে এগিয়ে যান এই কর্মকর্তা। ২০২২ সালে জাকিরের মাধ্যমে ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষক অপমানিত ও হেনস্তা হয়। একই বছরের জানুয়ারি মাসে জাকিরের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কক্ষে তালা দিয়ে তৎকালীন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আবু তাহেরকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। সবশেষ ২০২৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী উপাচার্যের কক্ষে শিক্ষক সমিতির নবনির্বাচিত নেতাদের থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন জাকির। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন