
জেলা প্রশাসক সূত্রে জানা যায়, পুরুষ কর্মকর্তা ছাড়া সমাজ উন্নয়ন সম্ভব নয় এ ধারণা ভুল প্রমাণিত করেছেন জেলার হোমনা, মেঘনা, তিতাস, দাউদকান্দি, চান্দিনা, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, আদর্শ সদর, সদর দক্ষিন, মনোহরহঞ্জ ও লালমাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত এগারো নারী। তারা সফলতা আর নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। এই এগারো কর্মকর্তারা দক্ষতার সঙ্গে উপজেলার সব বিভাগের কাজকর্মের সমন্বয় ও তদারকিসহ জেলার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে জনস্বার্থে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড,তদারকি-বাস্তবায়ন, মাদক নির্মূল, ইভটিজিং প্রতিরোধ, বাল্যবিবাহ রোধ, শিক্ষার উন্নতকরণ, জনদুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ তৃণমূলের নানা কাজ দক্ষতার সঙ্গে প্রতিনিয়তই সম্পন্ন করছেন।
এগারো নারী ইউএনও হলেন, হোমনা উপজেলায় ক্ষেমালিকা চাকমা, মেঘনায় হ্যাপী দাস, তিতাসে সুমাইয়া মমিন, দাউদকান্দিতে নাঈমা ইসলাম, চান্দিনায় নাজিয়া হোসেন, বুড়িচংয়ে সাহিদা আক্তার, ব্রাহ্মণপাড়ায় মাহমুদা জাহান, আদর্শ সদরে ফাতেমা তুজ জোহরা, সদর দক্ষিনে রুবাইয়া খানম, মনোহরগঞ্জে ফাহরিয়া ইসলাম ও লালমাই উপজেলায় হিমাদ্রী খীসা।
ইউএনও ক্ষেমালিকা চাকমা জেলার হোমনা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দুই বছরের বেশি সময় ধরে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ৩৪ তম ব্যাচের কর্মকর্তা। এর আগে তিনি নোয়াখালী সেনবাগ উপজেলার সেনবাগে এসিল্যান্ড হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।
তিনি এ প্রতিবেদকের এর সঙ্গে আলাপকালে বলেন,‘নারী ইউএনও হওয়ার কারণে আমাকে কোনও ধরনের প্রতিবন্ধকতার তেমন শিকার হতে হয়নি। তবে নারীর অধিকার আদায়ে আমাদের পরিবার ও সমাজে সচেতনতা বাড়াতে হবে। নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। সমাজের সর্বস্তরে নারীর অধিকার আদায়ে মানুষকে সচেতন করে তুলতে পারলে, চলার পথে নারীরা কোনও সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হবে না। ক্ষেমালিকা চাকমা আরও বলেন, প্রশাসন, রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, চাকরিসহ নানা ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারী এখনও পিছিয়ে রয়েছে। তৃণমূল নারীরা এখনও মা-বাবা, স্বামী, পরিবার ও সমাজের কাছে অবহেলিত। তারা সহিংসতা ও বৈষম্যের শিকার। এছাড়াও নারীরা ধর্ষণ ও বাল্যবিবাহসহ যৌতুকের জন্য স্বামীর কাছে নির্যাতন হচ্ছেন। আমাদের সমাজ থেকে এগুলো দূর করতে পারলে নারীর অধিকার আদায় আরও সহজ হবে।
সাড়ে পাঁচ মাস আগে দাউদকান্দি উপজেলায় প্রথম নারী ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন নাঈমা ইসলাম। তিনিও ৩৪ তম ব্যাচের কর্মকর্তা। এর আগে তিনি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাসিন্দা নাঈমা ইসলাম ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম জেলা সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
দাউদকান্দি উপজেলার ইউএনও নাঈমা ইসলাম বলেন, ইউএনও একটি পদের নাম। সেই ক্ষেত্রে আমি নারী না পুরুষ তা কোনও বিষয় না। ইউএনও হওয়ার আগে ও পরে আমি নারী হিসেবে কোনও প্রতিবন্ধকতার শিকার হইনি। প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও কোনও অসুবিধায় পড়তে হয়নি।
জেলার আরেক নারী ইউএনও হ্যাপী দাস। তিনি মেঘনা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও ৩৪ তম ব্যাচের কর্মকর্তা।
তিনি বলেন,‘নারীদের যে কোনও কাজ শুরুর আগে অনেক প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়। পরে তিনি যখন কাজটা সফলভাবে শেষ করেন তখন যে মানুষগুলো বিপক্ষে ছিল তারাই বেশি সহযোগীতা করে। আমাদের দেশে সর্বস্তরের নারীরা তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছে না। এখনও প্রায় অর্ধেকের বেশি নারী অবহেলিত। তারা এখনও পরিবারের কাছ থেকেই সমান অধিকার আদায় করতে পারেনি। নারীরা সমাজে এখনও নির্যাতনের শিকার। সমাজ ও পরিবারে সচেতনতা এলে দেশে তখন আর নারী দিবস পালন করতে হবে না।
এছাড়া এ জেলায় এগারো নারী ইউএনওর পাশাপাশি সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দায়িত্ব পালন করা ১০ নারী কর্মকর্তা হলেন– লাকসামে সিফাতুন নাহার, মনোহরগঞ্জে নাসরিন, ব্রাহ্মণপাড়ায় সৈয়দ ফারহানা, লালমাইয়ে মারজানা আক্তার, বুড়িচংয়ে সোনিয়া হক, চৌদ্দগ্রামে জাকিয়া সরওয়ার লিমা, আদর্শ সদর কুমিল্লায় তানজিনা জাহান, বরুড়ায় উম্মে মুসলিমা, চান্দিনায় নাজিয়া হোসেন (সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনও) ও মেঘনায়, মেঘনার ইউএনও হ্যাপী দাস নিজেই এসিল্যান্ডের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
তাছাড়া এ জেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পদটিতেও ফাহমিদা নামক আরেক নারী দায়িত্ব পালন করছেন।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার বলেন, বর্তমান সরকার নারীবান্ধব প্রশাসন পরিচালনায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। কুমিল্লায়ও নারীবান্ধব প্রশাসন পরিচালনায় বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। জেলায় ১৭টি উপজেলা মধ্যে কর্মরত ১১ নারী নির্বাহী কর্মকর্তা নিষ্ঠা ও সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। নারী হওয়ার কারণে দায়িত্ব পালনে করতে গিয়ে তাদের কখনও সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি। জেলা প্রশাসন তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছে এবং আগামীতেও করবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন