খোঁজ নিয়ে জানাযায়, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলারর ২২ ইউনিয়নে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত আগের চেয়ে কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। সন্ধ্যার পর দেশীয় অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকটি গ্রুপ সংঘবদ্ধ হয়ে নিয়মিত রাস্তাঘাটে ঘোরাফেরা করছে। সামান্য কথা কাটাকাটি হলেই তারা দেশীয় অস্ত্রসহ মারামারিতে জড়িয়ে পড়ছে। পাড়া-মহল্লায় গড়ে ওঠা এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা ইভটিজিং, চুরি, ছিনতাই, মাদক পাচারসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। এতে এলাকার বাসিন্দারা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
এটি এখন গলার কাঁটা হয়ে উঠতে শুরু করছে। এই অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে সামাজিকভাবে সতর্ক ও এগিয়ে আসতে হবে। তবে অতীতে বারবার কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক বাধা এসেছে। এবারও সেই একই বাধা মোকাবিলা করছে পুলিশ। সূত্র জানায়, এসব গ্যাংয়ে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছেলেমেয়ে বেশি।
পুুলিশ জানায়, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইমো, টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সবাই ঔক্যবদ্ধ নানা ধরনের অপরাধ করে চলেছে। এসব অপরাধের সঙ্গে যুক্ত আছে বিভিন্ন রাজনৈতিক চক্র। মূলত তাদের কারণে সারা দেশে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে কিশোর অপরাধীরা।
গোয়েন্দা তথ্য ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা দেশে কিশোর গ্যাং চক্রের সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। এজন্য তারা আব্বা বাহিনী, বাবা বাহিনী, সাদা বাহিনী, কালা বাহিনী, ককটেল বাহিনী, কাটা বাহিনী, ধাওয়া বাহিনীসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নাম ধারণ করছে।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, ঈদের পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুরাদনগর উপজেলা সদরের আল্লাহ চত্বরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ সময় দেশীয় অস্ত্রসহ উভয় পক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় পথচারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক এবং বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। গত দুই মাসে তুচ্ছ ঘটনায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের দ্বারা আহত হয়েছে ১৫-২০ জন। যার মধ্যে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যও রয়েছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে কোনো ঘটনায় থানায় অভিযোগ করার সাহস পায়নি ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সামান্য কথা কাটাকাটি কিংবা ব্যক্তিগত বিরোধ হলেই কিশোর গ্যাং সদস্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে হামলা করে। হাতে দা, ছুরি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তারা রাস্তায় নেমে আসে। যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারে নাজুক করে তুলেছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর সাধারণ মানুষকে আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। এ অবস্থায় এলাকাবাসী মুরাদনগর থানা পুলিশের প্রতি টহল জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন। এলাকাবাসী মনে করেন, পুলিশের নিয়মিত টহল ও কঠোর নজরদারির মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
উপজেলা সদরের নিমাইকান্দি এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এলাকায় ইদানীং চুরির ঘটনা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে মোবাইল চুরি হচ্ছে বেশি। দিনের বেলায়ও বাসা-বাড়ির জানালা বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে। আমাদের প্রতি মুহূর্তে চোর ও কিশোর গ্যাংয়ের আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের দ্রুত কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বাসিন্দা বলেন, তারা রাতে স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারছে না। কিশোর গ্যাংদের দৌরাত্ম্যে এলাকায় অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। সামান্য বিবাদেই মারামারিতে জড়িয়ে পড়ছে তারা। দ্রুত যদি পুলিশ টহল না বাড়ায়, তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
ডিআর হাইস্কুল এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, সন্ধ্যার পর ডিআর হাইস্কুল থেকে পশ্চিম দিকে মুরাদনগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান পর্যন্ত এবং পূর্বদিকে চৌধুরীকান্দি পর্যন্ত, মাস্টারপাড়া রোড ও সদরের নিমাইকান্দি এলাকায় কিশোর গ্যাং দল বেঁধে ঘোরাফেরা করে। সুযোগ বুঝে পথচারীর সর্বস্ব হাতিয়ে নেয় তারা। এজন্য সন্ধ্যার পর ওদিক দিয়ে চলাফেরার সময় এলাকাবাসী খুব আতঙ্কে থাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। খুব শিগগিরই টহল জোরদার করা হবে এবং যেসব কিশোর অপরাধে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন