আমি ক্লাস 3 , 7 ,8 না পড়েই অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী : ফাউজিয়া ফারহা রেশমী

 

আমি ক্লাস 3 , 7 ,8 না পড়েই অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী । 

সত্যি বলছি এ কথা সত্যি 😞 

আমার বাবা মায়ের আলাদা হয়ে যাওয়ার পর বাবা যখন নতুন আম্মুকে নিয়ে এসেছিল তখন কেমন আমি একদম পথে থাকা বাচ্চাদের মত হয়ে গেছিলাম । 

পড়াশোনা , খাওয়া, চেহারা কিছুই ঠিক ছিল না । 

 তখন ক্লাস 2 পড়ছিলাম । 

 ১ বছর পর সিদ্ধান্ত হলো আমি খালার বাড়ি তে থাকব । তো খালা আমাকে কি জন্যে জানি গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে ক্লাস 4 এ ভর্তি করে দিলো । প্রাইভেট পড়তাম যেহেতু ক্লাস 3 পড়ি নাই তাই একটু বেশি পড়তাম । ক্লাস 5 এ ক্লাস রোল হলো ২  । যাইহোক খুব পড়েছি অবশেষে বৃত্তি পরীক্ষায় আমি বৃত্তি ও পেলাম । 

আবার কি হলো বাবা চিন্তা করলেন আমাকে বাবার কাছে রাখবে তাই আবার স্কুল পরিবর্তন করে অন্য স্কুল এ ক্লাস 6 এ ভর্তি করে দিলো । সেখানেও ২য় সাময়িক পরীক্ষা দেয়ার পর বাবা আমাকে কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি করলেন বোর্ডিং মাদ্রাসা ছিল । সেখানে তো শুধু আরবী , উর্দু বই , ২ টা বাংলা লিখা বই ছিল তাও হাদিস এর । 

২বছর ১০ মাস মাদ্রাসায় পড়ে ইংলিশ ভুলে খাইছি । 

যাইহোক আবার খালার বাড়ি তে থাকার সিদ্ধান্ত হলো - আব্বুর কথা যেভাবেই হোক এস এস সি পাশ করতে হবে ক্লাস 8 এ দিলে পারবো না ফেল করবো এই ধারণা  থেকে আমাকে কারিগরি স্কুলে ক্লাস 9 এ ভর্তি করে দিলো যে অন্তত যেনো পাশ করতে পারি । 

মানে ক্লাস 7 ও 8 বাদ । 

ক্লাস 9 এর বই দেখে রীতি মত মাথা ঘুরছে । 

আমি ইংলিশ রিডিং পড়তে পারি না । গণিত তো অরে বাবা , তারপর রসায়ন , পদার্থ বিজ্ঞান , ভূগোল , আরো

কমার্স এর ২ টা বিষয় ছিল ।

আমি চিন্তা করলাম যখন পড়তেই হবে তখন ভালো করে পড়ি । 

আমি প্রাইভেট পড়লাম , নিয়মিত ক্লাস করলাম স্যার রা আমাকে জানতেন যে আমি মাদ্রাসায় পড়েছি এ জন্যে আমাকে খুব হেল্প করতেন । আর বলতেন আমাকে পাশ করতেই হবে যেভাবেই হোক । একটা স্যার আমাকে ফ্রি তে পড়াতেন । যাইহোক ক্লাস 9 e টেনে টুনে পাশ করে ক্লাস 10 এ উঠলাম । 

এবার যখন আমি মোটামুটি একটু লাইনে এসেছি তখন খুব বেশি পড়ালেখার ওপর আগ্রহ এসেছে । অন্যদিকে খারাপ লাগতেছিল যে কেউ কারিগরী শিক্ষা কে মূল্যায়ন করে না - মানে দেখে দেখে পাশ করে সবাই । 

আমিও জানতাম আমি দেখে দেখেই পাশ করবো কিন্তু ততক্ষণ স্যার দের ধারনা আমি ভালো রেজাল্ট করবো । আমার ও মনে হয়েছিল যে আমার দেখে দেখে পাশ করতে হবে না কিন্তু ইংলিশ এ ভয় । কিন্তু না আমি ইংলিশ এ B গ্রেড পেয়ে মোটামুটি  পয়েন্ট পেয়ে পাশ করেছি । এটা আমার ও আমার স্কুল এর জন্যে অনেক সময় খুশির । 

তারপর আর কারিগরি তে ইন্টার না পড়ে জেনারেলে চলে গেলাম ইন্টারমিডিয়েট এর জন্যে - অন্তত মানুষ যেনো এটা না বলে বই দেখে পাশ করেছি । 

যাইহোক ততদিনে আমি প্রচুর দুষ্ট ও হয়েছিলাম অবশেষে ইন্টারে আর্টস থেকে পাশ করলাম রেজাল্ট  A - , ইংলিশে - c গ্রেড ছিল 

। 

আমার কলেজ এর সবাই ফ্রেন্ডরা সবাই খুশি যে আমি পাশ করেছি । ইংলিশ ম্যাডাম আমাকে খুব ভালোবাসতেন আমাকে খুব হেল্প করেছেন পড়াশোনা ব্যাপারে। ইন্টার পাশ করেছি অনার্সে তো ভর্তি হতেই হবে ।

তারপর তো গাজীপুর এসে গাজীপুর ভাওয়াল কলেজে   অনার্সে ভর্তি হলাম ।

মানে আমি খুব পরিশ্রম করে এতদূর এসেছি ।

ইংলিশ এ আমি খুব  কাচা । 

অনার্সের ইংলিশ আরো কঠিন ।

তারপর ও যেহেতু আন্তর্জাতিক ভাষা ইংলিশ সেহেতু এটিকে আমার পারতেই হবে । 

এই মাসে স্পোকেন ইংলিশের একটা কোর্স করে নিবো ভাবছি । 

আমি ফাউজিয়া ফারহা রেশমী

গাজীপুর জোন

ওনার অফ নিব্রিতা Nibrita

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন