সরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন স্বামী। বিয়ের কিছুদিন পর প্রথমে টাকা চাইলেন পাঁচ লক্ষ। মেয়েটির বাবা অসুস্থ। আর্থিক অবস্থাও খুব ভাল নয়। মেয়ের সুখের কথা ভেবে তিন লক্ষ টাকা যোগাড় করে দিলেন। কিছুদিন পর আরো পাঁচ লক্ষ টাকা চাইলো স্বামী ও তার পরিবার; স্বামীর জন্য বাইক কিনতে হবে। আল্টিমেটাম দিলো, মেয়ের বাবার জায়গা-জমিও ছেলের নামে লিখে দিতে হবে। মেয়েটি তার বাবার বড় সন্তান। অন্য ভাইবোনদেরও ভবিষ্যত রয়েছে। এছাড়া, বাবাও অসুস্থ। কিছু করতে পারেন না। মেয়ে তার বাবাকে মানা করলো। নিজ ভাইবোন, বাবা-মাকে বিপদে ফেলে তার সুখের প্রয়োজন নেই। স্বামীর সংসারে তার উপর শুরু হলো নিপীড়ন। এর ওর কাছে গেলো মেয়েটি। কোনো উপায় হলো না।
ছেলের মা ছেলেকে অন্যত্র বিয়ে করাবে। মেয়ে খুঁজতে শুরু করলো। দু’চোখে অন্ধকার দেখছিল মেয়েটি। শ^শুড়বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি থানা এলাকায়। মেয়েটির বাবার বাড়ি কুড়িগ্রামেরই অন্য এক থানায়। মেয়েটি সংসার করতে চায়। সুখে শান্তিতে থাকতে চায় তার স্বামী সংসার নিয়ে। কোনো ভাবেই কোনো উপায় হলো না। তার দুর্গতির কথা জানালো মেয়েটি। বার্তা পেয়ে কথা বললাম, ছেলেটির এলাকার থানার ওসি রাজীব কুমার রায়ের সাথে। ওসি ফুলবাড়ি, কুড়িগ্রাম। তাকে বললাম, মেয়েটির পাশে দাঁড়াতে হবে শক্তভাবে। কথা বললাম, কুড়িগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরার সাথে। তারা সহযোগিতা করলেন।
ছেলের পরিবারের সাথে যোগাযোগ হলো। তাদেরকে নানাভাবে বোঝানো হলো, মেয়েটির সাথে অন্যায় হচ্ছে। তাকে তার পূর্ণ অধিকার দিয়ে সসম্মানে সংসারে ফিরিয়ে নিতে বললাম। ছেলে বা তার পরিবার কোনো ভাবেই সহযোগিতা করলো না। মেয়েটিকে বললাম মামলা করতে। মামলা হলো। সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা স্বামীকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হলো। মেয়েটিকে বললাম, ভেঙে পড়া যাবে না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে। থাকবো পাশে। আছিও।
[অধীনস্থ তিন সদস্যের সহযোগিতায় কেবল জানু থেকে আগষ্ট পর্যন্তই সারাদেশ থেকে প্রায় ত্রিশ হাজার (৩০,০০০) মানুষকে সেবা দেয়ার সুযোগ পেয়েছি নিজের নিয়মিত ও স্বাভাবিক দায়িত্ব পালনের বাইরে। এ এক অশেষ সৌভাগ্য। কৃতজ্ঞতা সৃষ্টিকর্তার প্রতি। তিনিই পৌঁছে দিয়েছিলেন অগনিত মানুষের ডাক। দিয়েছেন সুযোগ। কাজগুলো আমার আমাদের ছিল না। দায়িত্বও দেয়া হয়নি। হস্তক্ষেপের সুযোগও অবারিত নয়। তবে, বহুদূর থেকে নিত্য ভেসে আসে যে কান্না, তার মায়াজালে নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়ি আপনি আমি।]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন