মেইড ইন ইন্ডিয়া এবং লাভার গার্ল

১৯৯০-এর দশকে আমরা যারা তারুণ্যের রঙিন প্রজাপতি হয়ে উড়ে বেড়িয়ে বড় হয়েছি, তারা নিশ্চয়ই জানবেন সে সময় ইন্ডিয়ান পপ গানের একটা রাজত্ব ছিল। আর সেই রাজত্বের রানী  ছিলেন আলিশা চিনাই। আলিশার পপ গানের  অ্যালবাম মেইড ইন ইন্ডিয়া-র টাইটেল ট্র্যাক একটানা সবচেয়ে বেশিদিন চার্টে এক নম্বরে থাকার রেকর্ড করেছিল। এরপর এসেছিল 'লাভার গার্ল'! আলিশা নিজেই তার গানের সাথে পারফর্ম করতেন। 

২০০৫ সালে আলিশা ছিলেন রীতিমতো হট কেক । তখন তিনি ঢাকায় এসেছিলেন কনসার্ট করতে। ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে পৌঁছানোর পরই কনসার্টের আয়োজকদের  জানানো হয় আলিশাকে ভাইয়ার আমন্ত্রণে  (তারেক জিয়া) "খোয়াব ভবনে" তশরিফ নিতে হবে। ভাইয়া পপ তারকার সাথে মিট করবেন।  চারদলীয় জোট সরকার আমলে "ভাইয়া" নামটি আশির্বাদ বলে মনে করা হতো। কিন্তু আয়োজক বেচারা বুঝতে পারেনি ‘ভাইয়া’ টা কে? তিনি তেমন পাত্তা দেননি। কনসার্ট চলছিল, আলিশার দুর্দান্ত নাচগানে কয়েকশো দর্শক উন্মাদনায় মেতে উঠেছিল। এক ঘণ্টা পর পুলিশ এসে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় আয়োজককে। অভিযোগ ছিল, অনুমতি ছাড়া কনসার্টের আয়োজন। এরপর আলিশা চিনাইকে বলা হয় শীঘ্রই গাজীপুরে যেতে হবে। সেখানে বিএনপির যুবরাজ হুইস্কির গ্লাস হাতে আলিশার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। এরকম প্রস্তাবে তো আলিশা হতবাক। রাগে অগ্নিশর্মা হলেন। দেরি না করে শরণাপন্ন হন ভারতীয় দূতাবাসের। ভারতীয় দূতাবাস খোঁজখবর নিয়ে আসল ঘটনা বুঝতে পারে। আলিশাকে জানানো হলে তিনি চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেন। হোক না যুবরাজ, কিন্তু তিনি যাবেন না যুবরাজের ডাকে। ভারতীয় দূতাবাস এবার পররাষ্ট্র দপ্তরকে কঠোরভাবে জানিয়ে দেয়, দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে। পরদিন সকালে ক্ষুব্ধ আলিশা চিনাই ও তার কনসার্টের অন্যান্য  অংশগ্রহণকারীরা ভারতে ফিরে যান। আলিশার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে যুবরাজের জেদ বেড়ে গিয়েছিল। পরের সপ্তাহেই তিনি মুম্বাই থেকে ডেকে নেন "তু চিজ বড়ি হ্যায় মাস্ত মাস্ত"-- খ্যাত রাভিনা ট্যান্ডনকে। রাভিনার স্পর্শে আলিশার কাছ থেকে পাওয়া অপমানের জ্বালা ভুলে গিয়েছিল বিএনপির যুবরাজ। 

হিন্দি ছবির নায়িকাদের চেয়ে আলিশা কম সুন্দরী ছিলেন না। অনীল কাপুর শ্রীদেবীর মিস্টার ইন্ডিয়া ছবির "কাটে নেহি কাটতে.......আই লাভ ইউ"! এই গান কিশোর কুমারের সাথে গেয়েছিলেন আলিশা। কিশোর কুমারের সঙ্গে ডুয়েট গানে তার মধুমাখা কণ্ঠ মাতাল করে ছেড়েছিল শ্রোতাকুলকে। কণ্ঠের এমন মাদকতা দিয়ে আলিশা জনপ্রিয়তার চুড়ান্ত শিখরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। হিন্দি নায়িকার মত ধারালো ফিগারের অধিকারীনি ছিলেন আলিশা চিনাই। ফিগার ধরে রাখার জন্য  তিনি এও ঘোষণা দিয়েছিলেন কোনোদিন মা হবেন না। বলা বাহুল্য আলিশা কখনো সন্তান গর্ভে ধারণ করেননি। ১৯৮৬ সালে তিনি তার ম্যানেজার রাজেশ জাভেরিকে বিয়ে করেন। ১৯৯৪ সালে তাদের দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটে। বর্তমানে তার বয়স ৫৬ বছর। আলিশা তার বাবার ভীষণ ভক্ত। তার বাবার ক্যান্সার হয়েছিল, ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নিজেই বাবার দেখাশোনা করেছেন। বাবার সেবা শুশ্রূষার সম্পূর্ণটা আলিশা একাই করেছেন। গৃহকর্মী বা কেয়ারটেকারদের কাছেই আসতে দেননি। চলচ্চিত্রে আলিশার সর্বশেষ প্লেব্যাক ছিল বান্টি অউর বাবলি ছবির, "কাজরা রে কাজরা রে তেরে কারে কারে নেয়না"।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন