বেদনাবিধুর কাহিনী : বাবার লাশ রেখে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ হাসানের

মোহাম্মদ শরিফুল আলম চৌধুরী, কুমিল্লা : একটি অসীম শোকের মধ্যে দিয়ে যেতে হলো মো. হাসানকে। প্রবাসী বাবার মরদেহ বাড়িতে রেখে তাকে আজ এসএসসি পরীক্ষার আসনে বসতে হয়েছিল। কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ইউছুফপুর গ্রামে রবিবার সকাল ৭টার সময় এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখল সবাই।

মো. হাসান, যে ছিল তার বাবার স্বপ্নের আলো, আজ সেই বাবা আর নেই। হানিফ মিয়া, যিনি জীবনের তাগিদে ২০০৮ সালে সৌদি আরবের হাবুনা এলাকায় পাড়ি জমান, দীর্ঘ ১৭ বছর প্রবাসে থাকার পর এক হার্ট অ্যাটাকে ২২ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। বাবার মৃত্যু, হৃদয়ের গভীরে যে ক্ষত তৈরি করেছে, তা একমাত্র হাসানই বুঝতে পারে।

হানিফ মিয়ার মৃতদেহ ২৬ এপ্রিল রাতে ঢাকার এয়ারপোর্টে পৌঁছায়, আর তার সঙ্গে এসে পৌঁছায় সেই শোক, যা মুছে ফেলা সম্ভব নয়। পরদিন, রবিবার ভোরে হাসান যখন বাবার নিথর দেহ দেখে, তার চোখে শুধুই অশ্রু, বুকের ভেতর চাপা কষ্ট। ছেলেটি বারবার মূর্ছা যায়, কিন্তু তারপরও, অদৃশ্য এক শক্তি তাকে পরীক্ষার হলে পাঠাতে জোর করে। তার চাচাতো ভাই আরফিন, যিনি নিজেও পরীক্ষার্থী, তাকে নিয়ে যায় পরীক্ষাকেন্দ্রে।

পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষার প্রস্তুতির মতো কিছু ছিল না; তার মন ছিল শুধুমাত্র বাবার শোকে পূর্ণ। কিন্তু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেই সে যেন বাবার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি অক্ষুণ্ণ রেখেছে।

পরীক্ষা শেষে হাসান বাড়ি ফিরে আসে, আর তখনই বাবার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। একদিকে শোক, অন্যদিকে দায়িত্ব—এই ছিল তার অবস্থান।

এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবনের প্রতিটি দুঃখ-কষ্ট সত্ত্বেও মানুষের ওপর তার পরিবারের দায়বদ্ধতা কখনোই শেষ হয় না। হাসান আজকের দিনের শিক্ষার্থী, কিন্তু তার এই দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস তাকে জীবনের চরম মুহূর্তেও এগিয়ে চলতে শিখিয়েছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন