তালায় ইউএনও রাসেলের পক্ষে মানববন্ধন ||সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগে উত্তাল সাংবাদিক সমাজ

মোহাম্মদ শরিফুল আলম চৌধুরী, বিশেষ প্রতিবেদক : সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ রাসেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, চলমান দুর্নীতির তদন্ত ও সম্ভাব্য বদলি ঠেকাতে ইউএনও’র পক্ষ নিয়ে একদল ঠিকাদার ও রাজনৈতিক কর্মী মানববন্ধন আয়োজন করেন।

২৭ এপ্রিল সকালে তালা উপজেলা সদরের খেয়াঘাট মোড়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন উপলক্ষে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের মাত্র ৫০ গজের মধ্যে রাস্তা ব্যারিকেড করে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়। পুলিশ তেলের ব্যারেল, দোকানের তাক, বেঞ্চ ও কাঠ ফেলে খুলনা-পাইকগাছা সড়ক অবরোধ করে। মাইকে উচ্চ শব্দে স্লোগান ও বক্তব্য চলায় পরীক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

বিডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের গেটের সামনে অপেক্ষমাণ অভিভাবকরা জানান, চিল্লাচিল্লি ও উচ্চ শব্দের কারণে পরীক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। মুড়াকলিয়া, আটারই, সুজনসাহা, খড়েরডাঙ্গা ও নলতা গ্রামের অভিভাবকরাও একই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা জানান, মূল রাস্তা অবরোধ করায় দুরপাল্লার যানবাহন বিকল্প রাস্তায় স্কুল-কলেজের সামনে দিয়ে যাতায়াত করে, এতে পরীক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন তালা উপজেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মৃণাল কান্তি রায়, সাধারণ সম্পাদক শেখ শফিকুল ইসলাম, জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মফিদুল হক লিটু, ইসলামকাটি ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক, ধানদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমসহ অন্যান্য নেতাকর্মী ও কথিত সাংবাদিক এম এ হাকিম।

সূত্র জানায়, মানববন্ধনের আগে ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় তালা ডাকবাংলোয় ইউএনও’র পক্ষে প্রস্তুতি সভা হয়। ওই সভায় যুবদলের কথিত নেতা ‘ট্যাংরা সাইদ’ ওরফে ‘ফেন্সিডিল সাইদ’-এর আহ্বানে স্থানীয় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া হয়। সভায় ইউপি চেয়ারম্যান, ঠিকাদার ও কিছু সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ইউনিয়ন থেকে নারী-পুরুষ এনে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। এ কর্মসূচির জন্য ৫ লাখ টাকার বিশেষ বাজেট নির্ধারণ করা হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। ঠিকাদারদের অর্থায়নে দলের কিছু কর্মীকে আর্থিক অনুদানও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে ইউএনও শেখ রাসেলের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিক রোকনুজ্জামান টিপুকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। ২২ এপ্রিল উপজেলা কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সহকারী প্রকৌশলী এম এম মামুন আলমের সঙ্গে বাদানুবাদের জেরে ইউএনও’র নির্দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত টিপুকে ১০ দিনের কারাদণ্ড ও ২০০ টাকা জরিমানা করে কারাগারে পাঠায়।

সাংবাদিক টিপুর স্ত্রী, যিনি উপজেলা কৃষি দপ্তরে কর্মরত, তাকেও ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বামীর পক্ষে আইনি লড়াই না করার জন্য চাপ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে দেশব্যাপী সাংবাদিক সমাজ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে দ্রুত টিপুর জামিন দাবি করে। পরে প্রশাসন বাধ্য হয় টিপুকে জামিন দিতে।

বিএমএসএফ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আমেদ আবু জাফর স্থানীয় সাংবাদিকদের দুর্নীতিবাজদের পক্ষে না দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। একইসঙ্গে কথিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা আদালতে আপিল দাখিল করা হয়েছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন