মুরাদনগরে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত রাজনীতি : আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে দল ও জনগণের ক্ষোভ


সরকারি পদ ব্যবহার করে ভয়ভীতি, মিথ্যা মামলা ও হয়রানির অভিযোগ; বিএনপির ধারাবাহিক প্রতিবাদ, আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা মুখে তালা

মোহাম্মদ শরিফুল আলম চৌধুরী : একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার খেলায় নেমেছেন আসিফ মাহমুদ। সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে প্রাপ্ত প্রভাবকে হাতিয়ার বানিয়ে মুরাদনগরের রাজনীতিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে মরিয়া হয়েছেন আসিফ মাহমুদ—এমনটাই অভিযোগ করছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ভয়ভীতি প্রদর্শন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, প্রশাসনের একাংশকে ব্যবহার করে হয়রানি চালানোর মতো গুরুতর অভিযোগ।

একজন আওয়ামী লীগ নেতা জানান,

"দলের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। কারণ সবাই জানে, কথা বললেই তার পরিণতি কী হতে পারে।"

বিএনপির পাল্টা অবস্থান: রাজপথে সরব, গর্জন থেমে নেই

যেখানে আওয়ামী লীগ নেতারা আতঙ্কে নীরব, সেখানে বিএনপি মুখ খুলেছে সরাসরি। তারা মুরাদনগরের বিভিন্ন ইউনিয়নে গণমিছিল, বিক্ষোভ ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে।

জামাল মুন্সী  নামে একজন স্থানীয় বিএনপি নেতা বলেন,

"এই এলাকায় বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে চায় আসিফ। কিন্তু আমরা মাঠ ছাড়বো না। এই জনপদে ভয় দেখিয়ে রাজনীতি করা যাবে না।"

কায়কোবাদের ছায়া দীর্ঘ, আসিফ এখনো রাজনৈতিকভাবে অপরিপক্ব?

কায়কোবাদ—যার রাজনীতির অভিজ্ঞতা ৬০ বছরের। তিনি একাধারে সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও ত্যাগী নেতা হিসেবে মুরাদনগরে একটি ঐতিহাসিক নাম। অন্যদিকে, ১৯৯৮ সালে জন্ম নেওয়া আসিফ মাহমুদ তুলনামূলকভাবে একেবারেই নতুন এবং রাজনৈতিকভাবে কাঁচা বলেই মনে করেন স্থানীয়রা।

খোরশেদ আলম নামে এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, "একটা গাছ যতদিনে ফল দেয়, ততদিন তাকে যত্ন করতে হয়। রাজনীতিও তেমনি। এখনকার তরুণেরা ফল চায় গাছ লাগানোর আগেই।"

ভয়ভীতিকে আর গুরুত্ব দিচ্ছে না জনগণ

দলীয় নেতাদের বাইরে সাধারণ মানুষও এখন রুখে দাঁড়াচ্ছে। প্রতিদিনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, পাড়ার চায়ের দোকানে বা রাজনৈতিক আলোচনায় উঠে আসছে আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের কথা।

কামাল নামে একজন স্থানীয় তরুণ বলেন,

"আমরা ভয় পাই না। প্রশাসন দিয়ে মুখ বন্ধ করা যায়, মনের ভেতর জমে থাকা রাগ থামানো যায় না। এখন সময় এসেছে কথা বলার।"

মুরাদনগরে এখন স্পষ্টভাবে দুটি মেরু গড়ে উঠেছে—একদিকে কায়কোবাদ পরিবারের অভিজ্ঞতা ও ঐতিহ্য, অন্যদিকে আসিফ মাহমুদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও ক্ষমতার বলয়। তবে জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ প্রমাণ করে দিচ্ছে—রাজনীতি টিকে থাকে জনগণের ভালোবাসায়, ভয় দেখিয়ে নয়।

প্রশ্ন একটাই: নেতৃত্ব কি মানুষের জন্য, না শুধু নিজের জন্য?

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন