সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর পানি এখন পচা, কালো ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়েছে। দুই পাড়ের বাসিন্দারা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। নদীতে পড়ে আছে মরা গরু-ছাগল, আবর্জনা ও মাদকের বোতল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশকে শহর রক্ষায় গোমতী নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি অংশ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তখন থেকেই এটি ‘পুরাতন গোমতী’ বা ‘মরা নদী’ নামে পরিচিতি পায়।
কুমিল্লা নগরীর ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নদীঘেঁষা এলাকায় গড়ে উঠেছে ঘনবসতি। প্রভাবশালীদের দখলে নদীর দুই পাড় ও জলাধার। কচুরিপানা, আবর্জনা আর দোকানঘর গড়ে ওঠায় নদীটি এখন সরু খালের রূপ নিয়েছে।
থানা রোডের পাশ দিয়ে প্রবাহিত অংশে দেখা গেছে, অধিকাংশ জায়গা কচুরিপানা ও ময়লায় আচ্ছাদিত। কোথাও কোথাও মাছ চাষের জন্য কচুরিপানা পরিষ্কার করা হচ্ছে।
নদীপাড়ের গাংচরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী জালাল সরকার বলেন, “সরকারি নদীতে মরা গরু, কুকুর ও আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। পানির গন্ধে টিকাই যায় না।”
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, “৭৭২ জন অবৈধ দখলদারের তালিকা করা হয়েছে। লোকবল সংকটে অভিযান চালানো যাচ্ছে না। প্রশাসনের সহযোগিতায় উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হবে।”
আদর্শ সদর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্র জানায়, ২০০৩ সাল থেকে কয়েক দফায় উচ্ছেদ নোটিশ দেয়া হলেও কার্যকর হয়নি। ২০১৬ সালে গঠিত ৫ সদস্যের কমিটিও কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নিতে পারেনি। স্থানীয়দের মতে, বর্তমানে দখলদারের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।
চাঁনপুর এলাকার ষাটোর্ধ্ব এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সরকার যদি পুনর্বাসন করে উচ্ছেদ করে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। না হলে পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো?”
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা শাখার সভাপতি ডা. মো. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “গোমতী নদীকে ঢাকার হাতিরঝিলের আদলে গড়ে তুললে এটি কুমিল্লা নগরের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে।”
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ছামছুল আলম বলেন, “২০২১ সালের একনেক সভায় দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। তবে নদী দখলমুক্ত না হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। কাজ চলমান রয়েছে।”
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন