দুই রাত, দুই হামলা—মুরাদনগরে আতঙ্কের নাম ‘পালানো’ আওয়ামী লীগ

মোহাম্মদ শরিফুল আলম চৌধুরী, কুমিল্লা : দুই দিনের ব্যবধানে দুটি রক্তাক্ত ও আলোচিত ঘটনার সাক্ষী হয়েছে কুমিল্লার মুরাদনগর। একদিকে “আওয়ামী লীগ পালিয়েছে” এমন মন্তব্যের জেরে বিএনপির চার নেতাকর্মীকে ধারালো অস্ত্রে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে। অন্যদিকে, মধ্যরাতে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে এক আওয়ামী লীগ নেতা। দুই ঘটনার পেছনে রয়েছে আওয়ামী লীগের ভেতরের পুরনো দ্বন্দ্ব, বিএনপির গতিশীলতা, আর একটি প্রশ্ন—ক্ষমতার বাইরে থেকেও কারা পরিচালনা করছে এই সহিংস রাজনীতি?

একদিকে ‘আওয়ামী লীগ পালিয়েছে’—বলে রক্তাক্ত ৪ বিএনপি কর্মী। গত ৩ মে বাঙ্গরায় বিএনপির সমাবেশে যোগদানকে কেন্দ্র করে শুরু হয় কথার লড়াই, আর ৫ মে রাতে তা রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। পূর্ব ধইর পশ্চিম ইউনিয়নের জুয়েল মিয়ার ছেলে সৌরভের সঙ্গে একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক মিয়ার ছেলে জিহাদের বাকবিতণ্ডা পরিণত হয় নৃশংস হামলায়।

আহত জুয়েল, সৌরভ, জাহিদুল ও শাকিল এখন কুমিল্লা ও ঢাকার হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, হামলার নেতৃত্ব দেয় আওয়ামী লীগ নেতা মানিক মিয়ার ছেলে জিহাদ। স্থানীয়রা বলছেন, ক্ষমতায় না থেকেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা দাপটের সঙ্গে চলছেন, যেন তারা রাজনৈতিক রণক্ষেত্রে বিজয়ী সেনাপতি।

অপরদিকে সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা, চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকি : ৮ মে রাতের আঁধারে হামলা হয় সাবেক পাঁচবারের সংসদ সদস্য কায়কোবাদের বাড়িতে। মোটরসাইকেলে এসে দরজা ভাঙা, অশ্লীল গালাগালি, হত্যার হুমকি এবং ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি—সবই করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল হাসান, যিনি সাবেক এমপি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

নাজমুলের বিরুদ্ধে রয়েছে ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ ১১টি মামলা। অথচ তিনি প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের প্রভাব দেখিয়ে এলাকায় ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি পুলিশের কাছেও দেন দাপটের পরিচয়।

আসলে এখন কারা পরিচালনা করছে মুরাদনগরের রাজনীতি? একটি প্রশ্ন এখন পুরো মুরাদনগরে। আওয়ামী লীগ যখন সরকারে ছিল, তখন নিজেদের ভেতরের দ্বন্দ্বেই বিভক্ত ছিলো তারা। অথচ এখন যখন তারা বিরোধী অবস্থানে, তখন বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর দুঃসাহসিক হামলা চালানোর শক্তি কোথা থেকে আসছে?

স্থানীয় বিশ্লেষকদের মতে, মুরাদনগরের রাজনৈতিক সহিংসতার মূল কেন্দ্রে রয়েছে সাবেক এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের অনুসারীরা, যাদের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও সুবিধাবাদী চক্র আজও এলাকাকে অস্থির করে রেখেছে।

এখন মুরাদনগরের ২২ ইউনিয়নে নিরাপত্তাহীন জনগণ, অপরদিকে নিষ্ক্রিয় প্রশাসন রয়েছে প্রশাসন।

সাবেক এমপির বাড়িতে হামলা হওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে: একজন জাতীয় নেতার বাড়ি যদি নিরাপদ না থাকে, তাহলে সাধারণ জনগণ কেমন করে নিরাপদ থাকবে? প্রশাসনের নীরবতা আর আগের মামলায় ‘ওয়ারেন্ট’ দেখিয়ে দায় শেষ করার চেষ্টা জনমনে আরো উদ্বেগ ছড়াচ্ছে।

বর্তমানে মুরাদনগরে রাজনৈতিক সহিংসতার যে নতুন চিত্র সামনে এসেছে, তা শুধু দুই দলের সংঘর্ষ নয়, বরং একটি গভীর রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রমাণ। ‘ক্ষমতা নেই’—এই দাবি আজ প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ, হামলাকারীরা যেভাবে এলাকাজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করেছে, তা স্পষ্ট করে—ক্ষমতা থাকতে হয় না, ক্ষমতার ব্যবহার জানলেই যথেষ্ট।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন