হোমনা, মেঘনা, তিতাস, দাউদকান্দি, চান্দিনা, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ, মনোহরগঞ্জ ও লালমাই—এই এগারোটি উপজেলার প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে কাজ করছেন এগারো জন নারী ইউএনও। প্রতিদিন মাঠে-ময়দানে, কাঁধে দায়িত্বের ভার নিয়ে তারা দেখিয়ে দিচ্ছেন—নারী মানেই শুধুই সংসারের মা নন, তারা হতে পারেন গোটা উপজেলার অভিভাবক।
নারী ইউএনওদের দায়িত্ববোধ, দক্ষতা আর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি- জনস্বার্থে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা থেকে শুরু করে মাদক দমন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, ইভটিজিং মোকাবিলা, শিক্ষা উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা—সব কাজেই এই নারী ইউএনওরা প্রতিনিয়ত দৃষ্টান্ত রাখছেন। তাদের অনেকেই স্থানীয় সমাজে মা বা অভিভাবকের মতো সম্মান পাচ্ছেন।
হোমনার ইউএনও ক্ষেমালিকা চাকমা বলেন,
“নারী ইউএনও হওয়ার কারণে আমাকে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়নি। কিন্তু নারীর অধিকার আদায়ে সমাজে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। তৃণমূলের অনেক নারী এখনও অবহেলিত ও সহিংসতার শিকার।”
দাউদকান্দির ইউএনও নাঈমা ইসলাম জানালেন,
“আমি নারী না পুরুষ—তা মুখ্য নয়, আমি একজন ইউএনও। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে লিঙ্গ কোনও প্রভাব ফেলেনি।”
মেঘনার ইউএনও হ্যাপী দাস বলেন, “নারীরা যখন শুরুতে কোনও কাজ শুরু করেন, তখন অনেক বাধা আসে। কিন্তু সফল হলে তারাই পাশে এসে দাঁড়ায় যারা আগে বিরোধিতা করেছিল।”
নারী এসিল্যান্ডরাও এগিয়ে : এই জেলার আরও ১০ উপজেলায় নারী এসিল্যান্ডরা ভূমি ব্যবস্থাপনা, জনসেবামূলক কাজ, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় অনন্য ভূমিকা রাখছেন। তন্মধ্যে রয়েছেন সিফাতুন নাহার (লাকসাম), নাসরিন (মনোহরগঞ্জ), সৈয়দ ফারহানা (ব্রাহ্মণপাড়া), মারজানা আক্তার (লালমাই), সোনিয়া হক (বুড়িচং), জাকিয়া সরওয়ার লিমা (চৌদ্দগ্রাম), তানজিনা জাহান (সদর), উম্মে মুসলিমা (বরুড়া), এবং চান্দিনার ইউএনও নাজিয়া হোসেন ও মেঘনার ইউএনও হ্যাপী দাস যাঁরা একইসাথে এসিল্যান্ডের দায়িত্বও পালন করছেন।
নারীবান্ধব প্রশাসন গঠনে সরকারের অঙ্গীকার : কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার বলেন,
“বর্তমান সরকার নারীবান্ধব প্রশাসন গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কুমিল্লার নারী কর্মকর্তারা নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদেরকে সবসময় সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।”
মায়ের ছায়ায় প্রশাসনের আলোকিত নেতৃত্ব : মা দিবসে যখন দেশজুড়ে মায়েদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়, তখন কুমিল্লার এই ১১ নারী ইউএনও যেন প্রশাসনিক দায়িত্বে মা’র মমতা, দূরদর্শিতা আর আত্মত্যাগের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। তারা শুধু অফিসের দায়িত্ব পালন করছেন না—তারা জনসেবার মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন সমাজের বাতিঘর।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন