স্বামী মো. জসীম উদ্দিনের সাথে শুরু হয় তার নতুন জীবন। ভেবেছিলেন, হয়তো এবার একটু স্বস্তি মিলবে। কিন্তু সেই স্বপ্নও চূর্ণ হয় এক ভয়াবহ রাতে। ২০০০ সালের ৩০ এপ্রিল—তখনো শাহিনা গর্ভে ধারণ করছেন ছোট ছেলেকে। স্বামীকে তারই আত্মীয়রা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। এরপর লাশ ঝুলিয়ে রাখে ঘরে। সেই দিন থেকে শাহিনার জীবনে শুরু হয় শেষ না হওয়া এক যুদ্ধ।
দুই শিশু সন্তানকে বুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন পথে পথে। বিচার চেয়েছেন, সাহায্য চেয়েছেন—কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। বুকের ভেতর কান্না লুকিয়ে, চোখে ঝড় চেপে তিনি কাজ শুরু করেন। মানুষের বাসায় বাসায় কাজ করেছেন, ঠেলেছেন সেলাই মেশিন, দিনভর ঘর ঝেটেছেন অন্যের… শুধু সন্তানদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য।
দেবীদ্বার পৌরসভায় মাস্টার রুলে ১৯ বছর কাজ করেছেন শাহিনা। সৎভাবে বাঁচতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্ত এক সচিবের কুপ্রস্তাবে ‘না’ বলায় তিনি হারান সেই সামান্য চাকরিটুকুও। পাওনা টাকা বুঝে পাননি, বিচার চেয়েও পাননি আশ্বাস ছাড়া কিছুই।
তবুও হাল ছাড়েননি। বড় ছেলেকে অনেক ধারদেনা করে পাঠিয়েছেন সৌদি আরবে। ছোট ছেলে সাইফুল আজ একজন অনার্স পড়ুয়া ছাত্র, ইউটিউবের মাধ্যমে নিজের পরিচয় গড়ছে। তারা আজ যা কিছু, সবই একা এক মায়ের হাতে গড়া।
দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবিএম আতিকুর রহমান বাশার বলেন,“শাহিনা একজন সাহসী মা, একজন যোদ্ধা। আমি নিজে বহুবার তার জন্য লিখেছি, আবেদন করেছি। কিন্তু কিছু করতে পারিনি। মা দিবসে তাকে আমার স্যালুট।”
ছেলে সাইফুলের চোখে পানি জমে আসে মায়ের কথা উঠলেই— “আমার মা-ই আমার পৃথিবী। তিনি না থাকলে আমি কিছুই হতে পারতাম না।”
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক আমীরুল কায়সার বলেন,
“শাহিনা আক্তারের বিষয়ে আমরা যথাযথভাবে পদক্ষেপ নেব। তাঁর প্রতি অন্যায় হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।”
এই মা আমাদের চোখে জল আনে, বুকের ভেতর আগুন জ্বালায়। এমন সাহসী, সংগ্রামী একজন নারীকে আমরা শুধু ‘মা’ বললে ভুল হবে—তিনি আমাদের সমাজের প্রতিটি নিষ্পেষিত নারীর প্রতীক, জীবনের এক অনন্ত প্রেরণা।
মা দিবসে মোসাম্মৎ শাহিনা আক্তারের প্রতি আমাদের অন্তরের গভীরতম শ্রদ্ধা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন