১৯২৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একমাত্রবারের মতো কুমিল্লায় এসেছিলেন। তাঁর আগমনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ‘অভয় আশ্রম’-এর তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ত্রি-বার্ষিক সভায় সভাপতিত্ব করা।
তিনি কলকাতা থেকে রওনা হয়ে ট্রেনে গোয়ালন্দ, সেখান থেকে স্টিমারে চাঁদপুর হয়ে রাতের আঁধারে কুমিল্লায় পৌঁছান। শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিলেন তিনি, তাই কোনো সংবর্ধনা না করার অনুরোধ আগেই জানিয়েছিলেন। তবুও ২০ ফেব্রুয়ারি অভয় আশ্রমের কর্মীরা কবিকে একটি মানপত্র দেন। সেই মানপত্রের উত্তরে কবি বলেছিলেন:
“আত্মাই শান্তির উৎস। এই শক্তির সহিত পরিচয় লাভ করতে হলে আপনাকে সম্পূর্ণরূপে নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে। অভয় আশ্রমের কর্মীরা এইরূপে আত্মত্যাগ করছেন বলেই, শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও আমি এখানে এসেছি।”
কুমিল্লায় থাকাকালে (১৯ ফেব্রুয়ারী রাত থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত) কবি সভায় সভাপতিত্ব করেন, নাটক, খেলাধুলা, চরকায় সুতা কাটার প্রতিযোগিতা সহ নানা আয়োজন উপভোগ করেন। মধ্যাহ্নভোজে শহরের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। সভায় প্রায় সাত হাজারের বেশি মানুষের সমাগম ঘটে। এটি ছিল কুমিল্লার ইতিহাসে এক অনন্য সাংস্কৃতিক অধ্যায়। এই স্মৃতির সাথে মিল রেখে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অবস্থিত ‘হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ’ ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে কবির ১৬৪তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শুরু হয়।
বেলা ১১টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এবারের আলোচনার প্রতিপাদ্য ছিল—‘রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ’। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পঙ্কজ বড়ুয়া।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সহকারী পুলিশ সুপার মোস্তাইন বিল্লাহ ফেরদৌস, সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর মোহাম্মদ বশীর আহমেদ, অধ্যাপক শান্তি রঞ্জন ভৌমিক, গবেষক শ্যামপ্রসাদ ভট্টাচার্য, সাংবাদিক আবুল হাসনাত বাবুল, লেখক মোতাহের হোসেন মাহাবুব, ক্রীড়া সংগঠক নজির আহমেদ, এবি পার্টির জেলা সদস্য সচিব গোলাম মোহাম্মদ সামদানী এবং জাসাস সভাপতি মনজুরুল আলম ভূঁইয়া প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নজরুল ইনস্টিটিউটের জেলা কর্মকর্তা মো. আল আমিন হোসেন।
বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও সমাজচিন্তার পাশাপাশি তাঁর বাংলাদেশের প্রতি গভীর সংযোগের কথা তুলে ধরেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রসংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্য, যা অনুষ্ঠানে প্রাণ জুগিয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই একবারের সফর ও তাঁর চেতনাকে ঘিরে আজও কুমিল্লা শহর গর্বিত। তাঁর জন্মদিনে স্মৃতির পাতায় ফিরে দেখা এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে তাঁর আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়াই এই আয়োজনের মূল প্রেরণা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন